logo
logo

কংক্রিট ঢালাইয়ের পর কিউরিং

Blog single photo

কিউরিং হল একটি প্রক্রিয়া যেখানে কংক্রিট ঢালাইয়ের পর সেটিকে নির্দিষ্ট সময় ধরে আর্দ্র (ভেজা) অবস্থায় রাখা হয়, যাতে এটি ধীরে ধীরে সঠিকভাবে শক্ত (hard) হতে পারে এবং কাঠামো তার পূর্ণ শক্তি অর্জন করতে পারে।

বৈজ্ঞানিকভাবে:

কংক্রিটের মধ্যে সিমেন্ট ও পানি মিশে একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া হয় — যাকে Hydration বলে।

এই হাইড্রেশন ধীরে ধীরে হয় এবং এতে কংক্রিট শক্ত হয়।

কিউরিং না করলে পানি শুকিয়ে গেলে হাইড্রেশন বন্ধ হয়ে যায়, ফলে কংক্রিট দুর্বল হয়।

সহজ ভাষায়:

যেমন একটি গাছকে পানি না দিলে শুকিয়ে যায়, ঠিক তেমনি কংক্রিটকেও ঢালাইয়ের পরে কিছুদিন “পানি খাওয়াতে” হয়, যাতে সেটি ভাঙা না যায় এবং মজবুত হয় — এটিই কিউরিং।

কিউরিং এর উদ্দেশ্য:

• কংক্রিটের শক্তি বৃদ্ধি করা

• ফাটল রোধ করা

• টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী কাঠামো নিশ্চিত করা

• পানির ক্ষয় প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা

কিউরিং কেন করা হয়: কারণগুলো নিচে দেওয়া হলো —

1. শক্তি বৃদ্ধি (Strength gain):

কংক্রিটের মধ্যে সিমেন্ট ও পানির রাসায়নিক বিক্রিয়ায় (Hydration) কংক্রিট শক্ত হয়। কিউরিং না করলে পানির অভাবে এই বিক্রিয়া অসম্পূর্ণ হয়, ফলে কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে।

2. শুকিয়ে ফাটল রোধ (Crack prevention):

যদি কংক্রিট দ্রুত শুকিয়ে যায়, তবে তাতে ফাটল দেখা দিতে পারে। কিউরিং এই শুকিয়ে যাওয়াকে ধীর করে এবং ফাটল পড়া রোধ করে।

3. টেকসই কাঠামো নিশ্চিত করা (Durability):

সঠিকভাবে কিউরিং না করলে কাঠামো পরিবেশের প্রভাবে (যেমন, পানি, লবণ, রাসায়নিক) সহজেই ক্ষয়প্রাপ্ত হতে পারে। কিউরিং কাঠামোকে টেকসই করে।

4. সংকোচন কমায় (Shrinkage reduction):

কিউরিং করলে প্লাস্টিক ও ড্রাইং সংকোচন (shrinkage) কম হয়, ফলে ফিনিশিং ভালো হয়।

5. জলরোধী ক্ষমতা বাড়ায় (Improves water resistance):

ভালোভাবে কিউরিং করা কংক্রিটে পোরসিটি কম থাকে, ফলে এটি পানির প্রবেশ প্রতিরোধ করে।

কিউরিং সাধারণত কতদিন করা হয়?

সাধারণভাবে ৭ দিন থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত কিউরিং করা হয়।

M20 গ্রেড বা তার কম গ্রেডে: ৭ দিন

M25 বা তার বেশি গ্রেডে: ১০–১৪ দিন বা তার বেশি (বিশেষত গরম আবহাওয়ায়)

কিউরিং করার উপায়ঃ

পানিতে ভিজিয়ে রাখা

জুট ব্যাগ বা হেসিয়ান কাপড় ভিজিয়ে ঢেকে রাখা

পানি ছিটানো

কিউরিং কম্পাউন্ড ব্যবহার (যেখানে পানি সরবরাহ সম্ভব নয়)

নির্মাণ কাজে কোথায় কোথায় কিউরিং করতে হয় এবং কিভাবে করতে হয়:

কোথায় কিউরিং করতে হয়:

১. কলাম (Column):

কংক্রিট ঢালাইয়ের ২৪ ঘণ্টা পর ফর্মওয়ার খুলে পানির মাধ্যমে কিউরিং করতে হয়।

সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিন প্রতিদিন কয়েকবার পানি দিতে হয়।

২. বিম (Beam):

ফর্মওয়ার খুলে যাবার পর একইভাবে পানি দিয়ে কিউরিং করতে হয়।

বিশেষ করে উপরের অংশে বেশি ফোকাস দিতে হয়।

3. স্ল্যাব (Slab):

স্ল্যাবে কিউরিং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

ঢালাইয়ের ২৪ ঘণ্টা পর পানি জমিয়ে রাখতে হয় — চারদিকে মাটির বাঁধ বা বালি দিয়ে পানির ঘেরা তৈরি করা হয়।

৭–১৪ দিন ধরে প্রতিদিন পানি পরিবর্তন বা সংরক্ষণ করতে হয়।

4. ফুটিং / ফাউন্ডেশন (Footing):

ঢালাই শেষ হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর পানি ছিটিয়ে বা জমিয়ে কিউরিং করা হয়।

এতে কাঠামোর ভিত্তি আরও শক্ত হয়।

প্লাস্টার (Plaster):

প্লাস্টার দেওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর থেকে কিউরিং শুরু হয়।

৫ থেকে ৭ দিন প্রতিদিন ভিজিয়ে রাখা উচিত।

কিভাবে কিউরিং করা হয় (পদ্ধতি):

পানি ছিটানো (Sprinkling) প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় পর পর কংক্রিটে পানি ছিটিয়ে দেওয়া হয়।

জুট ব্যাগ বা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা ভেজা কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখে তা বারবার ভিজিয়ে রাখা হয়।

পানি জমিয়ে রাখা (Ponding) স্ল্যাব বা সমতল জায়গায় ছোট বাধ দিয়ে পানি জমিয়ে রাখা।

কিউরিং কম্পাউন্ড ব্যবহার যেখানে পানি পাওয়া যায় না, সেখানে রাসায়নিক স্প্রে করে আর্দ্রতা ধরে রাখা হয়

বিশেষ টিপস:

• খুব গরম আবহাওয়ায় কংক্রিট দ্রুত শুকিয়ে যায়, তাই বেশি যত্ন নিতে হয়।

• প্রথম ৭ দিন কিউরিং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ — এই সময় সিমেন্ট সবচেয়ে বেশি শক্তি অর্জন করে।

আপনার মতামত লিখুন

Top